চিরায়ত ইউনানি, আয়ুর্বেদ ও হার্বাল কোম্পানির ভেজাল আর নিম্নমানের ওষুধে যশোরের বাজার সয়লাব হয়ে গেছে। একইভাবে ফার্মাসিটিক্যালস কোম্পানির ওষুধও নিম্নমানের বলে শনাক্ত হয়েছে। গত এক বছরে এমন সাতটি প্রতিষ্ঠানের আটটি ওষুধ নিম্নমানের প্রমাণিত হওয়ায় উৎপাদন বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। ড্রাগ আইনে উৎপাদনকারী তিনটি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ড্রাগ আদালতে মামলা হয়েছে। জোরদার করা হয়েছে সার্ভিল্যান্স।
সূত্র জানায়, প্রচলিত ওষুধের গুণাগুণ ঠিক আছে কি না তা তদারকির জন্য ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তর বাজার থেকে ওষুধের নমুনা সংগ্রহ করে থাকে। গত এক বছরে জনস্বার্থে এমন ৮৫টি ওষুধের নমুনা সংগ্রহ করা হয়। ঢাকায় পাঠানো ল্যাব পরীক্ষার রিপোর্টে তিনটি ভেজালসহ আটটির মানবহির্ভুত বলে প্রমাণ মেলে। এই আটটিরই প্রোডাক্ট সাসপেন্ড করা হয়। এরমধ্যে ভেজাল তিন কোম্পানির বিরুদ্ধে যশোরের জেলা ও দায়রা জজ আদালতে মামলা করেছেন ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক। যে সাত প্রতিষ্ঠানের ওষুধ ভেজাল বা নিম্নমানের বলে অভিযুক্ত হয়েছে, এর ছয়টিই ইউনানি, আয়ুর্বেদ ও হার্বাল কোম্পানি। অপরটি ফার্মাসিউটিক্যালস কোম্পানি।
বাংলাদেশ কেমিস্ট অ্যান্ড ড্রাগিস্ট অ্যাসোসিয়েশন যশোর জেলা শাখার সভাপতি আব্দুল হামিদ চাকলাদার ইদুল বলেন, ভেজাল বা নিম্নমানের ওষুধ বাজারে বিক্রি হচ্ছে, এতে কোনো সন্দেহ নেই। তিনি অভিযোগ করে বলেন, একশ্রেণির গ্রাম্য ও শহরের কতিপয় আয়ুর্বেদ চিকিৎসক অসুদপায় অবলম্বন করে অনৈতিক কারবারে জড়িত বলে আমাদের কাছে তথ্য আছে। বেশি লাভের আশায় মিডফোর্ড থেকে আসা এসব ওষুধ কোনো কোনো ফার্মেসিও বিক্রি করতে বাধ্য হয় এজন্য যে, প্রেসক্রিপশনে ভালোমানের ওষুধের পাশাপাশি ঐসব নিম্নমানের ওষুধও গ্রাম্য বা আয়ুর্বেদ চিকিৎসকেরা লিখে থাকেন। আবার এক দোকানে সব ওষুধ না থাকলে ক্রেতা অন্য ওষুধ কিনতে চান না। এসব অপতত্পরতা বন্ধে সিভিল সার্জনসহ প্রশাসনের প্রতি আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, আমরা সবধরনের সহযোগিতা করার জন্য প্রস্তুত রয়েছি। একই সঙ্গে যেসব কারখানায় এসব উৎপাদন হয়, তা চিহ্নিত করে স্থায়ীভাবে সিলগালা করার দাবি এই ওষুধ ব্যবসায়ী নেতার।
ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরের যশোর কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মো. নাজমুল হাসান বলেন, ওষুধের গুণগত মান সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়ার জন্য বাজার থেকে উত্তোলন করে টেস্টিংয়ের জন্য নিয়মিত পাঠানো হচ্ছে। এতে ভেজাল ও নিম্নমানের ওষুধ নিশ্চিত হওয়া যাচ্ছে। প্রয়োজনীয় ব্যবস্থাও গ্রহণ করা সম্ভব হচ্ছে।
যশোরের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট কাজী মো. সায়েমুজ্জামান বলেন, ভেজাল, নকল কিংবা নিম্নমানের ওষুধের ব্যাপারে প্রশাসনের কঠোর নজরদারি রয়েছে। অভিযোগ পেলে আমরা ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করছি। আগামী দিনেও এ ধারা অব্যাহত থাকবে।
সিভিল সার্জন ডা. বিপ্লব কান্তি বিশ্বাস এক সাক্ষাৎকারে বলেন, ভেজাল, নকল ওষুধের ব্যাপারে আমাদের কাছে তথ্য আছে। এজন্য ওষুধ প্রশাসনের কর্মকর্তাকে অফিসে ডেকে কথা বলেছি। কিন্তু করোনা পরিস্থিতি আমাদের সবকিছুকে আটকে রেখেছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে এলেই আমরা অ্যাকশনে যাব
দৈনিক কলম কথা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।